কলাকোপার ঐতিহ্য নিয়ে অজানা কিছু তথ্য
রাজধানী ঢাকার অদূরে মধ্য যুগীয় এক নগর কলাকোপা | কলা শব্দের শাব্দিক অর্থ কারুকাজ এবং কোপা শব্দের অর্থ নগর | দুইয়ে মিলে যার অর্থ দাড়ায় কারুকাজ খঁচিত নগর বা কলাকোপা |
নবাবগজ্ঞ উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলা নবাব নন্দিনী ইছামতি নদীর দক্ষিন তীরে সমৃদ্ধ এই কলাকোপা নগরীর অবস্থান | অতীতে কতটা সমৃদ্ধ ছিলো এই নগরী তা স্বচক্ষে অবলোকন না করলে অনুধাবন করা কঠিন | পশ্চিমে আংশিক সাদাপুর ( গোয়াল নগর ) মধ্য নগর. বড় নগর. রাজারাম পুর পোদ্ধার বাজার. গোপাল পুর. পূর্বদিকে নন্দীর বাজার দক্ষিনে ঢাকা -বান্দুরা মহা সড়ক উত্তরে ইছামতি পর্যন্ত বিস্তৃত |
ধারনা করা হয় রাজধানী ঢাকার সম সাময়িক বা তারও আগে পূর্ব বাংলার রাজধানী সোনার গাঁয়ের পানাম নগরীর পরেই কলাকোপায় নগর সভ্যতার গোড়াপত্তন | বাংলার বারো ভূইয়াদের নেতা ঈসা খাঁ স্বীয় রাজ্যের নিরাপত্তার তাগিদেই রাজ্যের পশ্চিম অঞ্চলে দূর্গ নির্মানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন | বারো ভূইয়া নেতা ঈসা খাঁর হাত ধরেই কলাকোপায় নগর সভ্যতার যাত্রা শুরু |
দূর্গ নির্মানের পরপরই ঈসা খাঁ কলাকোপাকে স্বীয় রাজ্যের উপ রাজধানী ঘোষণা করেন | দিল্লির সম্রাট ঈসা খাঁর উত্থানে বিচলিত হয়ে তাকে প্রতিরোধে সুবেদার ইসলাম খানকে বাংলায় প্রেরন করেন | সুবাদার ইসলাম খান ঈসা খাঁর উপ রাজধানী কলাকোপা আক্রমন করে ঈসা খাঁকে পরাজিত করে কলাকোপায় অবস্থান নেন |
স্থানীয় বিদ্রোহী নেতা খেলারাম দাতাকে ( মতান্তরে দস্যু খেলারাম ) কলাকোপা বন্দোবস্ত দিয়ে ইসলাম খান ঢাকার দিকে অগ্রসর হন | পরে দূর্গটি স্বীয় ধর্ম হিন্দু সংস্কৃতির রীতিতে খেলারাম সংস্কার করে বসবাস শুরু করেন | সমৃদ্ধের সেই পদ চিহ্ন এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা এখনো বয়ে চলছে কলাকোপায় |
ঈসা খাঁর সেই দূর্গটি এখন খেলারাম দাতার বাড়ি বা আন্ধার কুঠা নামেই অধিক খ্যাত | বাড়িটি যে কোন সাধারন ব্যাক্তি পরিবার বা স্বজনদের বসবাসের নির্মিত্তে করেননি তা বাড়িটির নির্মান শৈলী থেকেই প্রতীয়মান |
দুতলা বাড়িটির নীচ তলায় বেশ কয়েকটি কক্ষের অস্তিত্ব অনুমেয় | পূর্ব দক্ষিন কোনে একটি উত্তর পশ্চিম কোনে অপরটি সিড়ি দুইটি উপড়ে উঠে গেছে তবে উত্তর পশ্চিম কোনের সিড়িটি ভূগর্ভের দিকেও ধাবমান | ভূগর্ভস্থ্য সিড়ির গন্তব্য এখনো অনাবিস্কৃতই রয়ে গেছে আলো জ্বেলেও দৃশ্যমান অনুভূত হয়নি |
উপড়ে দুতলায় কুড়েঘর আকৃতির পৃথক আটটি কক্ষ এবং মধ্য ভাগে গম্বুজ / মন্দির আকৃতির একটি কক্ষ রয়েছে | ধারনা করা হয় কুড়েঘর আকৃতির কক্ষ গুলোতে প্রহীরগন সারাক্ষন প্রহরায় থাকতেন মধ্য ভাগের কক্ষটি জলসা ঘর বা বাঈজী ঘর হিসেবেই ব্যাবহৃত হতো | শত্রুর সমূহ আক্রমনে আত্ম রক্ষার জন্য ভূগর্ভস্থ্য সিড়ি ব্যাবহার করে আত্ম রক্ষায় কোন উপায় ছিলো | বর্তমানে প্রত্নতাত্তিক অধিদপ্তরের অধীনে বাড়িটি সংরক্ষিত | "সংগ্রহীত"


0 Comments